বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ বৃহস্পতিবার | ৯ মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুর্নীতি উন্নয়নের অন্তরায়, এটা প্রতিরোধ করতে না পারলে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মুখ থুবড়ে পড়বে

বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৮:০৩ পূর্বাহ্ণ | 1942 বার

দুর্নীতি উন্নয়নের অন্তরায়, এটা প্রতিরোধ করতে না পারলে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মুখ থুবড়ে পড়বে

গত ৯ ডিসেম্বর ছিল আন্তজার্তিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস। অতি পরিতাপের বিষয় যে, আধুনিক বিশ্বে, সভ্যতার চরম শিখরে অবস্থান করেও আমাদেরকে দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালন করতে হয়। দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিষবাষ্প সবত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এই সর্বনাশা অনলে সব কিছু জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। দিন-দিন এর ব্যাপ্তী ব্যাপক থেকে ব্যপকতর আকার ধারণ করছে। কম বেশি দুর্নীতি সারা বিশ্বেই হচ্ছে। স্থান কাল পাত্র ভেদে এর ধরণ কৌশল আলাদা-আলাদা। অবস্থা যাই হউক দুর্নীতি হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে এটাই স্বাভাবিক। এ স্বাভাবিক যখন অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছে তখনই উদ্বেগ উৎকন্ঠার কারণ হয়ে দাড়ায়। স্বাভাবিক দুর্নীতি পৃথীবির সব রাষ্ট্রেই হচ্ছে। সমতালে প্রতিহত ও প্রতিরোধও হচ্ছে। উন্নত বিশ্বেও দুর্নীতি হচ্ছে তবে তা মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে কখনই পৌছাতে পারেনি। কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সেখানে সবাই সোচ্চার। দুনীতি গ্রহন না করে বর্জন করার কালচার সেখানে প্রতিষ্ঠিত। সেখানে দূর্নীতি করে সহসায় কেউ পাড় পেয়ে যেতে পারেনা বলেই সেখানে দুর্নীতি বাসা বাঁধতে পারেনি। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বে দুর্নীতির অবস্থা ভয়াবহ। এখানে ব্যপক ভাবে দুর্নীতি চর্চা, লালন, পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োগ হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দুর্নীতির বাসা বেঁধে ফেলছে। দুর্নীতির কারনে এখানে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মুখ থুবড়ে পড়ছে। দুর্নীতির কারনে এখানে কোন সৎ ও ভাল কার্যাদি স্মপন্ন করা যাচ্ছেনা। এ অবস্থার বাইরে আমরাও না। আমাদের দেশের অবস্থা মারাত্মক অবস্থানে। দুর্নীতির সূচকে আমরা তলানীতে। এ অবস্থা একটি স্বাধীন, সভ্য দেশ জাতির জন্য চরম লজ্জা এবং নিদারুন কষ্টের ব্যাপার। দুর্নীতির মহাসাগরে আমরা ভেসে বেড়াচ্ছি। উপরে দুর্নীতি। নীচে দুর্নীতি। সামনে দুর্নীতি। পেছনে দুর্নীতি। ডানে দুর্নীতি। বামে দুর্নীতি সব দিকেই দুর্নীতি। যে যেখানে অবস্থান করেছে সেখানেই দুর্নীতি চর্চা করছেন। দেশে দুর্নীতি নেই এমন স্পেস খুঁজে পাওয়া মুশকিল। দুর্নীতির রাহু আমাদের কে এমন ভাবে গ্রাস করেছে যে, অনেক সময় বাধ্য হই দুর্নীতি করতে। কিংবা আমাদের কে বাধ্য করা হয়। আমাদের দেশে দুর্নীতির কোন ধরণ বা কৌশল নেই। এখানে দুর্নীতি বিরুদ্ধে কর্যকরী ব্যবস্থা নেই। প্রতিরোধ নেই। সচেতনতা নেই। এটা দিন-দিন আমাদের কালচারের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এ নিয়ে করো কোন মাথা ব্যাথাও নেই। বরং যারা এর বিরুদ্ধাচারণ করছে বা করবে তাদের নানা হয়রানীর শিকার হতে হবে। এ ভাবেই চলছে বাংলাদেশ নামের সম্ভবনাময়ী সুজলা-সুফলা দেশটি। এখানে দুনর্ীূতি মানে পান্থা ভাত। একটা কচা মরিচ আর একটা পেয়াজ হলে সহসায়ই যেমন পান্থা ভাত খওয়া যায়, তেমনই অতি সহসায় এখানে দুর্নীতি করা যায়। এখানে প্রতিষ্ঠানিক দুর্নীতি, সামাজিক দূুর্নীতি, রাজনৈতিক দুর্নীতি, ব্যক্তিগত দুর্নীতি অনায়াশে চলছে। যে যার মত করে সজিয়ে গুছিয়ে নিপুর ভাবে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দুর্নীতি র্চ্চা করছে। এসব বলা, কওয়া, দেখার তেমন কেউ নেই। যারা বলবে, দেখবে তারাও প্রকারন্তরে কোন না কোন ভবে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। যার ফলে সম্ভব হচ্ছেনা দুর্নীতি ভুত তাড়ানো। জাতির স্কন্ধে দুর্নীতিনামীর যে ভুত চেপে বসছে তা দিন-দিন আরো বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। এর ফলে আমরা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছি। আমাদের সফলতার চাইতে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী হচ্ছে এবং বিশ্ব সমাজের নিকট আমরা নিন্দিত হচ্ছি। সাবই আমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। দুর্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে। দুর্নীতির তালিকার প্রথম সাড়িতে স্থান দিচ্ছে। সাহায্য সহযোগিতা হ্রাস করছে। এর পরও আমাদের বোধ উদয় হচ্ছেনা। কারো ঘুম ভাংছেনা । দুর্নীতির লেগাম টেনে ধরতে কেউ আসছে না । বরং কেউ কেউ দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাচ্ছে। কেউ কেউ উৎসাহিত করছে দুর্নীতিকে। আবার কেউ কেউ দুর্নীতিকে মার্সি করছে। একে অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছে। দোষারোপ করছে একজন অন্য জনকে। এই ফাঁকে, এই সুযোগে দুর্নীতির কালো হাত ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। আর এ জন্য দায়ী আমাদের অপরাজনীতি। নীতিহীন রাজনীতির কারনে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। এবং নীতিহীন রাজনীতির কারনেই দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে সকলে। আমাদের অপরাজনীতিই দুর্নীতির ধারক ও বাহক। নিজেদের স্বার্থ হাসিল, ক্ষমতা পাকা-পোক্ত করণ ও পেট ভারী করার জন্য রাজনীতিবিদগণ নানা ভাবে দুর্নীতিকে আশ্রয় দিয়ে আসছেন। তারা নিজেরা যেমন দুর্নীতি করছেন এবং অন্যদেরকে দুর্নীতি করার সুব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। দেশে সব কিছুতেই দলীয় করণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যখন যে দল ক্ষমতায় আসছেন সে দলের ছত্র ছাঁয়ায় থেকে দেদাচ্ছে দুর্নীতি চর্চা করে যাচ্ছে অনুগত ভক্তবৃন্দ। আর এ কারনেই দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রতিহত না হয়ে রিষ্টপুষ্ট, মোটা তাজা হচ্ছে। যা কবলে পড়ে দেশ জাতী রসাতলে যাচ্ছে। এ গর্হীত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। এথেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চার বিকল্প নেই। সে সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চয় আমাদের নেতা-নেত্রীদের মনোবিবেশ করা জরুরী। রাজনীতি হচ্ছে রাজার নীতি। এ নীতির সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক থাকতে পারেনা। রাজনীতির সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক আকাশ পাতাল ব্যবধান। এ ব্যবধান বজায় রাখতে না পারলে দুর্নীতি প্রতিহত হবে না, বরং তা উৎসাহিত হবে। দুর্নীতি উৎসাহিত করার রাজনীতি পরিবর্তনের সময় এসেছে। এ সময় ও সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। পতিত, কথিত, চর্চিত হাল রাজনীতি বাদ দিতে হবে নেতা-নেত্রীদের। জন কল্যানের জন্য রাজনীতি। উন্নয়ন অগ্রগতির জন্য রাজনীতি। সুখ, শান্তি সমৃদ্ধির জন্য রাজনীতি। দেশ-জাতী গঠনের জন্য রাজনীতি। এর বিকল্প হতে পারেনা। এর বিকল্প কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। জনকল্যাণের রাজনীতিতে নেতা-নেত্রীগণ যতদিন নিয়োজিত হতে না পারবে ততদিন দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রতিহত হবেনা। যে যার মত করে বলছে। যা খুশি করছে। কোন নিয়ন্ত্রন নেই। এ নিয়ন্ত্রনহীনতার কারনে দুর্নীতিবাজদের হাতে সারা দেশের মানুষ জিম্মি হয়ে আছে। সকল ক্ষেত্রে অনিয়ম। সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি। সকল ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা। সকল ক্ষেত্রে লুটপাট। সকল ক্ষেত্রে ঘুষ। এ যেন মগের মুল্লুক হবুচন্দ রাজার দেশ। দেশের এ অবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে নুতন করে। এ অবস্থা চলতে দেয়া যাবে না। এ থেকে পরিত্রান লাভ করা জরুরী। অনেক হয়েছে। অনেক সময় গড়িয়ে গেছে। আর কালক্ষেপন করার সুযোগ নেই। আর যাই হউক না কেন দুর্নীতির প্রশ্নে সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরী প্রয়োজন। অন্তত এ একটি বিষয়ে সব শ্রেণী পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার। মানুষে-মানুষে, জনে-জনে, ঘরে-ঘরে, দলে-দলে মতের অমিল থাকতে পারে, দ্বন্ধ সংঘাত থাকতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে। থাকাটা স্বাভাবিক। এর পরও সকল ভেদা-ভেদ ভুলে সকলের ঐক্য মনে পৌছেনো উচিৎ দুর্নীতি প্রতিরোধ ও প্রতিহত করতে। দুর্নীতি করব না দুর্নীতি মানবনা এই মন্ত্রে বলিয়ান হয়ে দুর্নীতিকে না বলার সপথে এগিয়ে যাওয়ার মিলন মেলায় সকলের ঐক্যবদ্ধ অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে পারলে ক্রমান্বয়ে দুর্নীতি নিঃশেষ হয়ে যাবে। এ জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক ঐক্যের বিকল্প নেই। এটা করাও তেমন দূরহ কাজ নয়। রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল গুলোকে এই ঐক্য মতে পোঁছাতে হবে, যে যখনই ক্ষমতায় থাকি কোন ভাবেই দুর্নীতিকে আশ্রয় প্রশ্রয় দিবনা। এ ঐক্যের প্রতি আমাদের এখানে যারাই রাজনীতি করেন তাদেও চিন্তা চেতনা থাকতে হবে। আগে দেশ পরে রাজনীতি। দেশের জন্য রাজনীতি, দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি। দেশের চাইতে রাজনীতি ও রাজনৈতি প্লাটফর্মকে বড় করে দেখলে চলবেনা, দেশ ও দেশের জনগণই বড়। এদরকেই বড় করে দেখতে হবে। একটি ক্ষুধা, দারিদ্র , দুর্নীতি মুক্ত স্বাধীন সর্বভৌম সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে। আমরা স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও ক্ষুধা তাড়াতে পারিনি, দরিদ্র তাড়াতে পারিনি, দুর্নীতির বিষবৃক্ষ উৎঘাটন করতে পারিনি। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত কতের পারিনি। কর্মক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতা নিশ্চিত করতে পারিনি। এটা ভাবলে যে কেই কষ্ট পাবে। এ চেতনায় সোনার বাংলা স্বাধীন হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিলনা যে, আমরা দুর্নীতি চর্চা করবো, দুর্নীতি লালন পালন করবো, দলীয়করণ করবো, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বাইরে থাকবো, এ আশায় এ ভরসায়, এ স্বপ্নে দেশ স্বাধীন হয়নি। দুর্নীতির কালো বিড়াল সর্বত্র বিচরণ করবে আর আমরা সে কালো বিড়ালের তাড়া খাবো একাত্তরের মক্তিযুদ্ধ জাতী সে জন্য করেনি। দেশের প্রতিটি সেক্টর দুর্নীতিগ্রস্থ। যেদিকে চোখ যায় দুর্নীতির কালো মেঘ চোখে পড়ে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই, কথা নেই। যে যার মত করে চলছে, বলছে। দুর্নীতি পতিরোধে সামাজিক সামর্থন থাকতে হবে। রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো যদি ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারে তা হলে তাদের প্রতি সামাজিক সমর্থন অবশ্যই থাকবে। কারণ দুর্নীতির কারনে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। সামাজিক বিকাশ সাধিত হচ্ছেনা। সবাই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা সকলে ঐক্যমত পোষন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সিন্ধান্ত নিতে পারলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সময়ের ব্যপার। এর প্রতিরোধে দরকার সুস্থ ধারার রাজনীতি। সুস্থ চিন্তা-চেতনা। এটা করতে পারলে সফলতা সুনিশ্চিত। দুর্নীতির মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক লাভবান হয়। আর বিরাট অংশ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দেশ, জাতী ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়। উন্নয়ন অগ্রগতি ব্যহত হয়। গুটি কয়েক লোকের স্বার্থ সুরক্ষার কালচার থেকে বের হয়ে আসা খুব কঠিন কিছু না। শুধু দুর্নীতি প্রতিরোধ, প্রতিহত করতে পারলেই আমরা উন্নয় অগ্রগতির কঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পরবো এটা আমি নিশ্চিত করে বললাম। আসুন দুর্নীতিকে না বলি। দুর্নীতি প্রতিরোধ করি। দুর্নীতি প্রতিহত করি। সে সাথে সপথ করি, দর্নীতি করব না, দুর্নীতি মানব না।

লেখক: শহীদুল ইসলাম পাইলট, বাংলাদেশ মোফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক রুদ্রবার্তা, শরীয়তপুর।


সর্বশেষ  
জনপ্রিয়