শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ শনিবার | ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সকল খাস জমি উদ্ধারের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করে তা দিয়ে ভূমিহীনদের পূনর্বাসন করা হউক

বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৮:২২ পূর্বাহ্ণ | 1948 বার

সকল খাস জমি উদ্ধারের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করে তা দিয়ে ভূমিহীনদের পূনর্বাসন করা হউক

ভূমিদস্যু বিপুল পরিমান সরকারী খাস ভূমি অবৈধভাবে দখল করে নানা ধরণের স্থাপনা তৈরী করে দখল পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন। যা যে কেউ দখলে বিশ্বাস করতে চাইবে না যে, সরকারী খাস ভূমি দখল করে এসব স্থাপনা স্থাপিত হয়েছে। বছরের পর বছর, কেউ কেউ যুগের পর যুগ এ সব স্থাপনা নিজস্ব বলয়ে রেখে ব্যবসা বানিজ্য ও আবাসিক কাজে ব্যবহার করে আসছেন। কী পরিমান খাস জমি বেদখলে চলে গেছে তার হিসাব ভূমি সংশ্লিষ্টরা দিতে পারবেন বলে মনে হয় না। খাস ভূমির হিসাব তাদের কাছে থাকলেও ভূমিদস্যু দ্বারা গ্রাসকৃত খাস ভূমির পরিমান তাদের জানা নেই। তবে বিভিন্ন মাধ্যমের খবর, বাস্তব অবস্থা প্রত্যক্ষদর্শী ইত্যাদি পর্যালোচনা করে উতোমধ্যেই শতকরা ৭০ ভাগ খাস জমি সম্পূর্ণ বেদখলে চলে গেছে। যতটুক বাকি আছে তাও প্রকারান্তরে কোন-না কোন ভাবে দখল দারিত্বের মধ্যেই অবস্থান করছে। এ অবস্থা জেলার সর্বত্র বিরাজমান। সরকারের সকল ধরনের খাস জমি যেমন- নদী, খাল, সমতল, হাট-বাজার ইত্যাদি সব কিছুই দখল হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। রাজনৈতিক ছত্রছাঁয়ার নানা উপায়ে ম্যানেজ করে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে এসব খাস জমি দখল করে নিচ্ছে। ভূমিদস্যুরা তাদের দখল দারিত্ব বজায় রাখার জন্য সব সময় শাসক দলের ছত্রছাঁয়ায় থাকে। এর ফলে তাদের অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেনা বা বলতে পারেনা। প্রশাসনও দেখে-শুনে না দেখার ভান করেন আর এতেই সব জায়েয হয়ে যায়। এই দেখে না দেখার, জেনে না জানার, শুনে না শুনার ভানের কারনে, কিংবা অনুরাগ অনুকম্পা, সহানুভূতি, ভয়-ভীতি ইত্যাদি কারণে সরকারী খাস ভূমি বেদখলের মচ্ছুব চলছে। এ ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব প্রশাসনের উপরই বর্তায়। এ দায় দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। সরকার প্রশাসনকে কখনই বলেনি যে, তাদের ছত্রছাঁয়ায় থাকা লোকের যা খুশী তা করবে আর প্রশাসন ছাড় দিবে। সরকার এও বলেনি যে, ভূমিদস্যুদের অনুরাগ, অনুকম্পা প্রদর্শণ করতে হবে। তা হলে কেন ভূমিদস্যুরা ছাড় পাচ্ছে ? কেন দখল হয়ে যাচ্ছে শত-শত একর সরকারী খাস জমি ? এর প্রতিকার প্রয়োজন। প্রতিকারের দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে। দখলদার যত প্রভাবশালীই হউক, যত ক্ষমতাধরই হউক, যত রাজনৈতিকই হউক সে অবৈধ, আইন অবমাননাকরী ও জুলুমবাজ। সে কারণে সে অপরাধী। অপরাধী যত শক্ত কথাই বলুক যত ভাব-সাবই দেখাক আইনের নিকট সে অসহায়। আইনের হাত অনেক শক্ত এবং লম্বা। যে আইন বিচারপতির বিচার করেন। সে আইনের মাধ্যমে সামান্য ভূমিদস্যুর বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত না হওয়ার কারণ নেই। প্রয়োজন সততার সাথে, নিরপেক্ষভাবে যথাযথ ভাবে আইনের সঠিক প্রয়োগ। এ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারেেল কোন অবৈধ শক্তিই মাথা তুলে দাড়াতে পারবেনা। সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ গ্রহন করছেন তাকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। অতি সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ শরীয়তপুর কোর্ট চত্বরে সরকারী ভূমি দখল করে অবৈধ ভাবে স্থাপিত শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন কে ধন্যবাদ। এ ধরনের আলোকিত উদ্যোগ দেশ,জাতী ও রাষ্ট্রের কল্যান বয়ে আনবে। নিঃসন্দেহে এ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। ধারাবাহিকতাও বজায় রাখতে হবে। শুধু কোর্ট চত্বরে সরকারী খাস ভূমি দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদই না, সারা জেলার যত সরকারী খাস ভূমি বেদখলে চলে গেছে তা চিহ্নিত করে দখল মুক্ত কর দরকার। তা না হলে সার্বিক সফলতা পাওয়া যাবেনা। সার্বিক সফলতা পেতে হলে সকল অবৈধ দখলদারকে তাড়া করতে হবে। সেই সাথে উচ্ছেদকৃত ভূমিতে পুনরায় যেন অবৈধ স্থাপনা স্থাপিত হতে না পারে এবং পুন:দখল না হয় সে দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কোন অর্জনই যেন ম্লান হয়ে না যায় সে দিকে খেয়াল রেখে সকল অপশক্তির কালো হাত ভেঙ্গে দিয়ে করাকরি খাস ভূমি উদ্ধার তৎপরতা জোরদার করে তা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এ প্রয়োজন সকলের কল্যান নিশ্চিত করবে। ভূমিহীনদের ঠিকানা নিশ্চিত করবে। দেশে বিপুল সংখ্যক লোক ভূমিহীন ভাসমান অবস্থায় মানবেতার জীবন যাপন করছে। তারা মাথা গোজার ঠাই খুজে পাচ্ছেনা। এখানে সেখানে তাদের বসবাস। এ আশ্রয়হীন মানুষ গুলোর জন্য এক টুকরো জমি বড় প্রয়োজন। সরকার যদি তার বেদখলে থাকা খাস জমিগুলো উদ্ধার করে ঐ ঠিকানা বিহীন মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারে তা হলে দেশে ভূমিহীন কেউ থাকবে বলে মনে হয় না। ভূমিহীনের জীবনের আর্তনাদ বড় করুণ। যার ভূমি নাই সে ছাড়া এ আর্তনাদ কেউ শুনবেনা, কেউ বুঝবে না। এ অসহায় মানুষ গুলোর জন্য খাস জমির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। সরকারী খাস জমি চিহ্নিত করে তা অবৈধ দখল মুক্ত করে ভূমিহীনদের তালিকা তৈরী করে পর্যায়ক্রমে ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বিতরণ করতে পারলে দেশ ভূমিহীনতার অভিশাপ মুক্ত হতে পারতো। এটা খুব কঠিন কজ নয়। প্রয়োজন সদিচ্ছা। প্রয়োজন সঠিক উদ্যোগ। সে সাথে ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বিতরণ ব্যবস্থা ও পরিবর্তন করা প্রয়োজন। বর্তমান ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল ও দীর্ঘ মেয়াদী। এ ব্যবস্থায় ভূমিহীনরা সরকারী খাস জমি চেয়েও এক পর্যায়ে ব্যর্থ হয়। আবার অনেকে পেয়ে তা ভোগদখল করতে পারতেছেন না। বর্তমান প্রক্রিয়ার প্রথমে স্থানীয় ভূমি অফিসে আবেদন করতে হয় । আবেদনের স্থানীয় ভূমি অফিস প্রস্তাবনা তৈরী করে তা উপজেলা ভূমি অফিসে প্রেরণ করেন। উপজেলা ভূমি অফিস তা উপজেলা ভূমি বন্দোবস্ত কমিটির নিকট পাঠায়। উপজেলা ভূমি বন্দোবস্ত কমিটি তাদের কার্যাদি সম্পন্ন করে তা প্রেরন করেন জেলা প্রশাসকের কর্যালয়। জেলা প্রশাসক তা প্রেরণ করে তার কর্যালয়ের সংশিষ্ট দপ্তরে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর তাদের কর্যাদি সম্পন্ন করে তা পুনরায় উপজেলা ভুমি অফিসে প্রেরণ করেন। উপজেলা ভূমি অফিস তা প্রেরণ করেন উপজেলা সাব রেজিস্ট্রির নিকট। এরপর প্রয়োজনীয় কাগজ হাতে পান একজন ভূমিহীন। এরপর দেখা যায় যে, উক্ত ভূমি বেদখলে। তখন সে তা আর মুক্ত করতে পারেন না। দখলে যেতেও পারেনা। এ হল বর্তমান খাস জমির প্রদান ব্যবস্থা। যা অত্যন্ত কঠিন ও প্রচুর সময় সাপেক্ষ। এ সময়ও প্রক্রিয়াক্ষেপন করে একজন হতদরিদ্র অসহায় ভূমিহীনের পক্ষে ভূমির অধিকার প্রাপ্তি সম্ভব হয়ে উঠে না। ভূমিহীনদের সরকারী খাস ভূমি প্রদান প্রক্রিয়া আরো সহজ করা প্রয়োজন। তা না হলে ভূমিহীনরা ভূমিহীন থেকে যাবে। একজন অসহায় ভূমিহীনকে এক টুকরো ভূমি প্রদান করতে এত প্রক্রিয়ার দরকার কোন মতেই যুক্তি যুক্ত নয়। একজন প্রকৃত ভূমিহীনের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরজমিনে দেখভাল করে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে তা প্রদান করা উচিৎ। এটা করতে পারলে কাঙ্খিত সফলতা পাওয়ার আশা করা যেতে পারে। তাহলে ভূমিহীনরা ভূমিহীনই থেকে যাবে। আর সরকারী সকল খাস ভূমি অবৈধ দখলদারদের কবলেই থাকবে।

লেখক: শহীদুল ইসলাম পাইলট, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক রুদ্রবার্তা, শরীয়তপুর।


সর্বশেষ  
জনপ্রিয়