শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আজ শনিবার | ২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মৃত ছোট ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাতে মরিয়া বড় ভাই

বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০২০ | ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ | 173 বার

মৃত ছোট ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাতে মরিয়া বড় ভাই

ভেদরগঞ্জে অবিবাহিত মৃত ছোট ভাইয়ের সম্পত্তি অন্যান্য ওয়ারিশদের ঠকিয়ে আত্মসাত করার জন্য বড় ভাই প্রাণপন চেষ্টায় রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ওই মৃত ভাইয়ের বসত বাড়ি দখলে নিয়ে অন্যান্য ভাইদের বঞ্চিত করাসহ সম্পত্তি বিক্রির টাকাও সুকৌশলে আত্মসাতের চেষ্টায় রয়েছে বড় ভাই। বাড়ি থেকে অন্য ভাই ও তার পরিবারকে বের করে দেওয়ার চেষ্টায় অব্যাহত রেখেছে সে। এই ষড়যন্ত্র থেকে তার বৃদ্ধা অসুস্থ মাও বাদ পড়েনি।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, উপজেলার কাইচকুড়ি গ্রামের মৃত শহর আলী মাঝি ও মরিয়ম বেগমের দাম্পত্য জীবনে দেলোয়ার, মনোয়ার, মোক্তার, আক্তার, উজ্জল মাঝি নামে ৫ পুত্র ও জানু নামের এক কন্যা সন্তান ছিল। শহর আলী মাঝির মৃত্যু পরবর্তী ছেলে দেলোয়ার, মনোয়ার, আক্তার ও মোক্তার কুয়েত এবং উজ্জল দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসে থাকতেন। বছর খানেক পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুবৃত্তের গুলিতে উজ্জলের মৃত্যু হয়। উজ্জলের জীবদ্দশায় পৈত্রিক সম্পত্তিতে উজ্জল ও আক্তার একটি পাঁকা দালান নির্মাণ করেন। ওই সময় দেলোয়ার বাড়ি নির্মাণে বাঁধা প্রদানসহ মামলা মোকদ্দমার আশ্রয় গ্রহন করে উজ্জল ও আক্তারকে হয়রাণী করে। উজ্জলের মৃত্যু পরবর্তী নির্মাণাধীন ভবনে দেলোয়ার ও মোক্তার বসবাস শুরু করে। উজ্জলের রেখে যাওয়া সম্পত্তি সাম্প্রতি সময়ে একক ভাবে দখল করার জন্য মোক্তারকেও সেই বাড়ি থেকে বের করে দিতে চায় দেলোয়ার মাঝি। একই সাথে আক্তারের সম্পত্তিও দেলোয়ারের দখলে নিয়ে বাড়ির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে রাখেন। উজ্জলের রেখে যাওয়া ঢাকার সম্পত্তি বিক্রির টাকাও ওয়ারিশদের মাঝে বন্টনে বাঁধ সেজেছে দেলোয়ার।

অভিযোগ করে মোক্তার মাঝি বলেন, ভাই উজ্জল ও আক্তার মিলে এই বাড়ি বানায়। বাড়ির কাজ শেষ না হতেই প্রবাসে উজ্জলের মৃত্যু হয়। তখন আক্তার ও কুয়েত প্রবাসে ছিল। আমি নির্মানাধীন ভবনে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করি। তখন আমার মা অন্য একটি কক্ষে থাকত। মা চোখের চিকিৎসার জন্য ঢাকা গেলে বড় ভাই দেলোয়ার মায়ের কক্ষের তালা ভেঙ্গে সেই কক্ষে দখল নেয়। এখন এই বাড়ি একা দখল করার জন্য বড় ভাই ও তার স্ত্রী মিলে নানান ষড়যন্ত্র করতেছে। ইতোমধ্যে আমি ও আমার স্ত্রী সন্তানদের উপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন শরু করেছে। সোমবার বাড়ির প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে রাখে। উজ্জলের রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রির টাকাও দেলোয়ার তার ভাড়াটে লোক দিয়ে আটক করে রেখেছে। স্থানীয়রা বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছে কিন্তু দেলোয়ার মাঝি অন্য এলাকার লোকজনের পরামর্শে এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

মোক্তারের স্ত্রী খুকুমনি বলেন, আমি ছোট ছোট ৩টি সন্তান নিয়ে এই বাড়ির এক অংশে থাকি। বাড়ি থেকে বের করার জন্য আমার ভাসুর দেলোয়ার মাঝি ও তার স্ত্রী আমার স্বামীকে মারধর করে। আর আমি ও আমার সন্তানদের সাথে খারাপ আচরণ করে। আমি জবাব দিলে মারতে আসে তাই চুপ থাকি। কিন্তু আমার ছোট ছোট সন্তানদের সাথে তারা যখন খুব বেশী খারাপ আচরণ করে তখন আমার খুব কষ্ট লাগে। তবুও কোন প্রতিবাদ করি না। গতকাল ভবনের প্রধান ফটকের পুরাতন তালা সরিয়ে নতুন তালা দিয়ে রাখে। সেই তালার চাবি আমাদের কাছে না থাকায় ঘর থেকে বের হতে পারি নাই। স্থানীয়দের বিষয়টি জানানোর পরে আজ তালা খুলে দিয়েছে দেলোয়ার মাঝি।

দেলোয়ার, মনোয়ার, মোক্তার, আক্তার, উজ্জল ও জানুর মা মরিয়ম বেগম বলেন, দেলোয়ারের সবই লাগবে। আমাকে দৌড়ের উপর রেখে আমার মৃত ছেলেসহ অন্যান্য ছেলেদের সম্পত্তি দখল করতেছে দেলোয়ার। উজ্জলের রেখে যাওয়া সম্পত্তি সকলেই পাবে কিন্তু দেলোয়ার সেই সম্পত্তি কাউকে না দেওয়ার জন্যই এই ঘটনা ঘটায়। দেলোয়ার ওই বাড়ি বানাতে বাঁধা দেয়। ওই বাড়ি বানাতে দেলোয়ারের কোন টাকা দেয় নাই। আজ সকল ওয়ারিশদের ঠকিয়ে জোর করে ওই বাড়ি দখলে রাখছে।

অভিযুক্ত দেলোয়ার মাঝি বলেন, আমার পৈত্রিক সম্পত্তিতে উজ্জল ও আক্তার বাড়ি তৈরীর কাজ শুরু করে। জমি বন্টন করে বাড়ির কাজ করতে বলি। আমার কথা না মানায় থানা পুলিশ দিয়ে কাজও বন্ধ করে দেই। ফাকে ফাকে সেই বাড়ির কাজ করে বাড়িটি থাকার উপযোগী করে। পরবর্তীতে জমি বন্টন করে সমাধান করে। ওই বাড়ি তৈরীতে আমার কোন অংশগ্রহণ নাই। তবে আক্তারের কাছে আমি টাকা পাওনা আছি তাই এই বাড়ি দখল করছি। উজ্জলের রেখে যাওয়া ঢাকার বাড়ি বিক্রির টাকা ঝামেলা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ওয়ারিশদের মাঝে বিতরণ করা হবে না। বাঁধা দিয়ে সেই টাকা লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছি।


সর্বশেষ  
জনপ্রিয়